ঢাকা , বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ২৫ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রয়েন প্রাথমিক বিদ্যালয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ


আপডেট সময় : ২০২৫-০৯-০৯ ২১:৪১:৪৩
রয়েন প্রাথমিক বিদ্যালয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েন প্রাথমিক বিদ্যালয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

তৈয়বুর রহমান (কালীগঞ্জ) গাজীপুর:     

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের রয়েন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাফুজা খাতুনের বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে অভিযোগ রয়েছে, তদন্ত প্রক্রিয়াও হয়েছে পক্ষপাতমূলক, যাতে প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা পড়েছে।     

বিদ্যালয়ের স্কুল ম্যানেজিং কমিটির (এসএমসি) দাতা সদস্য মো. সাখাওয়াত হোসেন এই অভিযোগ করেন। তিনি দাবি করেন, বিদ্যালয়ের ‘স্লিপ’ (স্কুল লেভেল ইমপ্রুভমেন্ট প্ল্যান) ও ‘কন্টিনজেন্সি’ ফান্ডের অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নেই, এমনকি এসব খাতের ব্যয়ের কোন হিসাব কমিটির কাছে উপস্থাপন করা হয়নি।     

অভিযোগপত্র সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ জুলাই দাতা সদস্য সাখাওয়াত হোসেন বিদ্যালয়ে গিয়ে হিসাব-নিকাশ যাচাই করতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাফুজা খাতুন তা দিতে অস্বীকৃতি জানান এবং প্রকাশ্যে তাঁকে অপমান করেন। এরপর ৩১ জুলাই তিনি উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ও এডহক কমিটির সভাপতির কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেন।     

অভিযোগকারীর দাবি, বিষয়টি তদন্তের আশ্বাস দিলেও ২৫ আগস্ট বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেননি। বরং অনিয়মের বিষয় স্বীকার করেও তা এড়িয়ে যান।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, তদন্তে নিয়ম বহির্ভূতভাবে পুনসহি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নূরে আলম বাবলু , নারগানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান মুহাম্মদ শামীম শেখ এবং বাঙ্গালগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবদুল্লাহ আল মামুন উপস্থিত ছিলেন।

অভিযোগ অনুযায়ী, তারা তদন্তে অংশ নিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষককে পক্ষপাতমূলকভাবে সহযোগিতা করেন। এছাড়া, তদন্তের দিন বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে দুপুরের খাবারের আয়োজন, শিক্ষকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং অভিযোগ না করার জন্য চাপ প্রয়োগের অভিযোগও করা হয়েছে।     

অভিযোগে বলা হয়, একটি চেয়ার-টেবিলের প্রকৃত মূল্য প্রায় ১৫ হাজার টাকা হলেও সেটি হিসাবপত্রে ২৬ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে। একইভাবে বেসিন ক্রয় ও বিদ্যালয়ের গেট নির্মাণ কাজেও অনিয়ম হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের স্লিপ বাজেটের কোন কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি বলেও দাবি করেন অভিযোগকারী। তাছাড়া, কোন ক্রয়ের রশিদ, ব্যাংক স্টেটমেন্ট বা স্টক রেজিস্টারও দেখানো হয়নি।     

তিনি আরও উল্লেখ করেন, এসব কর্মকাণ্ড প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আর্থিক বিধি, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ও তথ্য অধিকার আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।     

অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত তিন শিক্ষক বলেন, “আমাদের তদন্তে থাকার কথা নয়। আমরা কেউ পক্ষপাত করিনি। ওইদিন আমাদের ক্লাস্টার প্রধানের সঙ্গে অন্য কাজে গিয়েছিলাম।”     

অভিযুক্ত রয়েন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাফুজা খাতুন বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সঠিক নয়। বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক তার ব্যক্তিগত ইস্যুতে আমার সাথে শত্রুতাকে কেন্দ্র করে বিদ্যালয়ের স্কুল ম্যানেজিং কমিটির (এসএমসি) দাতা সদস্যের সাথে উদ্দেশ্যে প্রনোদিতভাবে অভিযোগ করেছেন। আমি এর আগে বিদ্যালয় সভাপতিসহ সকল সদস্যকে নিয়ে করা মিটিংএ হিসাব-নিকাশ বুঝিয়ে দিয়েছি।     

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ও বিদ্যালয় এডহক কমিটির সভাপতি শারমিন শাহী বলেন, এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবর বিদ্যালয়ের স্কুল ম্যানেজিং কমিটির (এসএমসি) দাতা সদস্য সাখাওয়াত হোসেন অভিযোগ করেছেন। সেই অভিযোগ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে গেছে। এখন যা করার তিনি করবেন।     

তবে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুন্নাহার জানান, “বিষয়টি আমলে নিয়ে আমরা ইতিমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। বিতর্কিতদের কমিটিতে রাখা হয়নি। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”     

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এটিএম কামরুল ইসলাম বলেন, “উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছেন। তদন্তে অনিয়মের প্রমাণ মিললে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”



 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ